চুুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।  কালো চুল কার না পছন্দ? প্রায় প্রতিটি মেয়েই সুন্দর চুল চায়। তাই বলা হয়, চুলই হলো নারীর সৌন্দর্য। এই চুল নিয়ে তাই চিন্তার শেষ নেই। চুলের সকল সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে অতি কাছে থাকা এই উদ্ভিদটি যার নাম- কালোকেশী।

মূলত, চুল কালো করতে এই গাছ থেকে কালো রং বের করা হয় বলে এই গাছকে কালোকেশী বলা হয়। এছাড়াও এর আরো অনেক নাম রয়েছে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেই।

পোস্ট সূচিপত্রঃ চুুলের যত্নে কালোকেশীর ব্যবহার

কালোকেশীর পরিচয়

কালোকেশী একটি ঔষধি গুণাগুণ সম্পন্ন উদ্ভিদ। কালোকেশীর ঔষধি গুণ এবং এটি যে চুলের জন্যও উপকারি এ সম্পর্কে অনেকেই জানেনা। আমাদের চারপাশে থাকা সত্ত্বেও আমরা চিনিনা বা জানিনা বলে অবহেলায় ফেলে রাখি মুল্যবান এই গাছটি।

কালোকেশীকে অনেক নামে ডাকা হয়। বিভিন্ন এলাকায় এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। অনেকে এটিকে কেশরাজ বলে ডাকে, আবার কেউ বলে কেশুতি, অনেকে আবার এটিকে কালসাতা বলেও ডাকে। আমরা এটিকে কালোকেশী বলেই জানি।

নামের মতো এই গাছটি দেখতেও প্রায় সবার কাছেই পরিচিত। কেননা গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি জায়গায় এর সন্ধান পাওয়া যায়। পথে-ঘাটে, পুকুরের ধারে, নদীর ধারে প্রায় সর্বত্রই কালোকেশী দেখতে পাওয়া যায়। এর উপকারিতা জানিনা বলেই তা দেখেও না দেখার ভান করে পায়ে দলিয়ে চলে যাই আমরা।

প্রাচীন সময়ে যখন চুলের জন্য এত আধুনিক প্রসাধনী ছিল না তখন মা-বোনেরা চুলের যত্নে কালোকেশীর মতো প্রাকৃতিক উপাদানগুলোই ব্যবহার করত। কালোকেশী নাম থেকেই বোঝা যায় যে চুলকে কালো করতে ব্যবহার করা হয়। শুধু চুলকে কালো করাই নয়, চুলের সব রকম সমস্যা দূর করার গুনাগুন কালোকেশীর মধ্যে রয়েছে। 

কালোকেশী গাছের বৈশিষ্ট্য

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার করবেন কিন্তু এটি চিনবেন না বা এর বৈশিষ্ট্য জানবেন না তা কি হয়? বৈশিষ্ট্য বলতে, একটি জিনিস বা বস্তু দেখতে কেমন হয় বা কিভাবে তাকে চেনা যায় সেটিকে বোঝায়। কালোকেশীরও তেমনি সাধারণ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন জায়গায় কালোকেশী দেখতে পাওয়া যায়। শুধু বাংলাদেশেই নয় ভারত, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া সহ আরো বিভিন্ন দেশে এই গাছ পাওয়া যায়। তবে দেশভেদেও এর ভিন্ন ভিন্ন নাম রয়েছে। তবে গুণে কিন্তু পার্থক্য নেই। 

কালোকেশী একটি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, পাতা সবুজ এবং গাছে ছোট ছোট ফুল হয়। ফুলগুলো সাদা রংয়ের। এটি ছাড়াও এর আরো অনেক রকম জাত রয়েছে। আরেক ধরণের জাত আছে যার ফুলগুলো হলুদ রঙের হয়। তবে এটি দেখতে যেমনই হোক না কেন ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ একটি উপকারী গাছ এটি। 

চুলের যত্নে কালোকেশীর উপকারিতা 

চুল নিয়ে চিন্তা সব সময়ের। বাজারের অনেক রকম প্রসাধনী চুলের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করে। মানুষের প্রয়োজনে কত কত প্রসাধানী তৈরি হয়েছে। সবকিছু যে সঠিক উপকার করে তা নয়, উপকারের চেয়ে এর অপকারিতাই বেশি। 

চুল পড়া রোধ করতে গিয়ে চুল পড়া অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে, খুশকি বাড়িয়ে দিতে পারে, চুল ভেঙে যাওয়া এরকম নানা সমস্যার সৃষ্টি হয় বাজারের প্রসাধনী বা প্রোডাক্ট সমূহ ব্যবহার করার ফলে। এছাড়াও এগুলো মাথার ত্বকেরও সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে।

আরো পড়ুনঃ ঘরে বসে অনলাইন ইনকামের ১৫ টি উপায় 

তাই চুলের যত্নে ঘরোয়া উপায়ের কোন বিকল্প নেই। ঘরোয়া উপায়ে নানা ভাবে চুলের যত্ন নেওয়া যায়। সেরকমই একটি উপাদান হচ্ছে কালোকেশী। যা দিয়ে সহজেই চুলের যত্ন নেওয়া যায় ঘরে বসেই। এবং এর কোন সাইড ইফেক্ট নেই। 

কালোকেশীতে রয়েছে ভিটামিন-ই, ভিটামিন-ডি যা চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার করলে আরো অনেক উপকার পাওয়া যায়। এর উপকারিতা গুলো হল-

  • চুল লম্বা করতে সাহায্য করে
  • নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ফলে চুল হয় ঘন
  • চুলকে কালো ঝলমলে করতে সাহায্য করে 
  • চুলের খুশকি দূর করতে সাহায্য করে 
  • চুল থেকে উকুন দূর করতে সাহায্য করে 

এরকম নানা ধরনের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উদ্ভিদ এই কালোকেশী। বিশ্বাস করতেই অবাক লাগে তাই না? পথে-ঘাটে পরে থাকা কোনো গাছ কি করে এত উপকার করতে পারে? হ্যা, এটি এমনিভাবেই নানা উপকার করে আমাদের। তাই বাজারের প্রোডাক্ট ব্যবহার না করে ঘরোয়া উপায়ে কালকেশী ব্যবহার করুন চুলের যত্নে। 

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার পদ্ধতি 

কালোকেশী পাতা, রস দুটোই চুলের জন্য অনেক বেশি উপকারী। অনেক পদ্ধতিতে এটি চুলে লাগানো যায়। আপনিও কালোকেশী বিভিন্নভাবে ব্যবহার করতে পারেন। চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার করা যায় মূলত-

  • কালোকেশী তেল হিসেবে
  • কালোকেশী টনিক হিসেবে
  • কালোকেশী মাস্ক হিসেবে
  • কালোকেশী টোনার হিসেবে

ইত্যাদি। এরকম বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বনে কালোকেশী চুলে ব্যবহার করা যায়। আপনিও যেকোনো উপায়ে এটি ব্যবহার করতে পারেন। হেয়ার টনিক এবং টোনার দুটি নাম কাছাকাছি হলেও এর মধ্যে পার্থক্য আছে। চুলের যত্নে এভাবে কালোকেশী ব্যবহার করে আপনি পেতে পারেন আপনার পছন্দ অনুযায়ী স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল।

কালোকেশী পাতার তেল তৈরি করার নিয়ম 

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই। কালকেশীর পাতা দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে তেল তৈরি করা যায়। এই তেল তৈরি করার জন্য বেশ কিছু উপাদানের প্রয়োজন হয়। সেগুলোও খুব সহজেই আশেপাশে থেকে পাওয়া যায়। তেল তৈরি করার নিয়মটি হলো-

জবা ফুল, মেথি, আমলকি এবং কালোকেশীর পাতা একসাথে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। তারপর ২৫০ গ্রাম নারিকেল তেল নিয়ে ব্লেন্ড করা পেস্ট এর সাথে ভালোভাবে মিক্স করে নিতে হবে। তারপর মিশ্রণটি চুলায় জাল দিয়ে হালকা গরম করে নিতে হবে।

বেশি গরম করা যাবে না কারণ বেশি গরম করলে তা চুলের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সব প্রক্রিয়া শেষ হলে তেলটি বোতলে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী এই তেল চুলে ব্যবহার করতে পারবেন। সপ্তাহে ২ দিন এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। 

এটি আপনার চুল ভেঙে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে এবং চুল হবে সুন্দর, সিল্কি, ঘন এবং মজবুত। তাই চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহার করুন উক্ত উপায়ে। এই তেল আপনি কাচের বোতলে অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। 

কালোকেশী টনিক তৈরির নিয়ম

চুলের যত্নে কালোকেশী তেল ছাড়াও টনিক হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। কালোকেশী টনিক তৈরির জন্য-

২৫০ গ্রাম তিলের তেল, ২৫০ গ্রাম নারিকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে। কালোকেশীর পাতা বেটে সেই রস তেলের মধ্যে দিতে হবে। তারপর এতে গোটা আমলকি, গোটা জবা ফুল, এক মুঠ কারি পাতা ও সামান্য মেথি দিয়ে দিতে হবে। সব একসাথে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে ছেঁকে রেখে দিতে হবে।

তারপর সব প্রক্রিয়া শেষ হলে কাঁচের বোতলে তা সংরক্ষণ করতে হবে। এটি চুলে ব্যবহার করলে মাথা ঠান্ডা থাকবে, খুশকি দূর হবে, চুল পড়া কমবে, চুল লম্বা হবে এবং চুল কালো হবে। এছাড়াও এটি রাতে শোয়ার সময় মাথায় দিয়ে সাদা কাপড় মাথায় বেঁধে রাখলে পরদিন দেখবেন সব উকুন মরে গেছে।

কালোকেশী মাস্ক তৈরির নিয়ম

তেল এবং টনিক ছাড়াও কালো কেশীর মাস্ক হিসেবে আপনার চুলে ব্যবহার করতে পারবেন। অকালে চুল পেকে যাওয়া একটি অনেক বড় সমস্যা। এই সমস্যা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত কিন্তু এই অকালপক্কতা দূর করার জন্য ভালো কোনো প্রোডাক্ট আসলে পাওয়া যায় না।

এই অকালপক্কতা দূর করতে কালোকেশীর কোনো বিকল্প নেই। কালোকেশী মাস্ক আপনার অকালপক্কতা রোধ করতে সাহায্য করবে। আমরা জানি, মাস্ক ত্বকের ভেতর থেকে সমস্যার সমাধান করে। কালোকেশী মাস্কও মাথার ত্বককে সুস্থ্য রাখতে সাহায্য করে। কালকেশী মাস্ক তৈরির নিয়ম হলো-

প্রথমে কালোকেশীর পাতা বেটে নিন। তার মধ্যে ২ চামচ মেথি গুঁড়া, ডিমের কুসুম, টক দই, নারকেল তেল মিশিয়ে মাস্ক তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি এভাবে তৈরি করে মাসে চারবার লাগাবেন তাহলে আপনার চুলের অকালপক্কতা দূর হবে এবং আপনার চুল হবে অনেক বেশি কালো, সুন্দর এবং মসৃণ।

কালোকেশী টোনার তৈরির নিয়ম

চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহারের আরেকটি উপায় হলো টোনার হিসেবে ব্যবহার করা। সাধারণত, চুল পাকা রোধ করতে এটি ব্যবহার করা যায়। টোনার চুলের জন্য খুব উপকারি এবং প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। আর এটি আমরা খুব সহজে ঘরেই পেয়ে যাচ্ছি। কালোকেশীর টোনার তৈরির নিয়ম-

কালোকেশীর পাতা পানির সাথে মিশিয়ে গরম করে ফুটিয়ে নিন। ঠান্ডা হলে তা মাথায় লাগিয়ে আধা ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। খুশকির জন্য কালোকেশী পাতার রস ব্যবহার করুন। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করলে উকুনও দূর হয়ে যায়।

এরকম অনেক সমস্যা দূর করা যায় কালোকেশীর মাধ্যমে। তাই আপনিও চুলের যত্নে কালোকেশী ব্যবহারের এই সহজ উপায়টি অনুসরণ করে চুলকে সুন্দর এবং কালো করে নিন। টোনারটি হতে পারে আপনার জন্য চুলের যত্নের সেরা একটি মাধ্যম।

লেখকের কথা

চুলের যত্নে কালোকেশীর ব্যবহার বহুল। এই সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য আজ আমরা জানতে পেরেছি। আপনারা কালোকেশী ব্যবহার করে চুলের সব সমস্যা দূর করতে পারেন এভাবে প্রাকৃতিক উপায়ে। চুলকে ভালো রাখতে এর গুরুত্ব বুঝে এই গাছেরও যত্ন নেওয়া উচিত।

আমরা এভাবেই নতুন নতুন তথ্য দিয়ে বিভিন্ন আর্টিকেল লিখে থাকি। অজানাকে জানতে সাহায্য করে থাকি। এরকমই নানা ধরনের তথ্যবহুল আর্টিকেল পেতে আমাদের সাথেই থাকুন। আমাদের লেখাটি ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানান এবং চোখ রাখুন দ্য অনলাইন আইটিতে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

দ্য অনলাইন আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url